শোকের ছায়া সিনেমা জগতে, চলতি বছরে মারা গেছেন যেসব জনপ্রিয় বাঙালি তারকা
অভিশপ্ত এই বছর ২০২০। কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ। বাদ যায়নি কেউই। মানুষ ছাড়াও পশু, পাখি, উদ্ভিদ অনেক প্রাণ গেছে। বছরের শুরু থেকেই চলছে মৃত্যুমিছিল।
চিরতরে বিদায় নিয়েছে আমার বা আপনার কাছের মানুষরা। তবে কিছু মানুষ অমরত্ব পেয়েছেন। কারণ তারা শিল্পী। আর শিল্পীর কখনও মৃত্যু হয়না। কথা বলবো টলিউডের এমনই কিছু শিল্পীকে নিয়ে যারা অমরত্ব লাভ করেছেন।
তাপস পাল – ১৯৮০ সালে ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি। এরপর ১৯৮১ সালে করেন ‘সাহেব’। এরপর আরো কত হিট হিট বাংলা ছবি উপহার দিয়েছেন বক্স অফিসকে। একসময় প্রসেনঞ্জিৎ আর তাপস পাল ছিলেন বাংলা সিনেমার হিরোদের মধ্যে অন্যতম। এইসময়ে ছবি চ্যালেঞ্জ ২’ হোক বা ‘মন মানে না’ সবেতেই দুর্দান্ত ফিট ছিলেন প্রয়াত তাপস পাল। এমনকি বলিউড অভিনেত্রী ১৯৮৪-তে মাধুরীর বিপরীতে ‘অবোধ’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই এই বিষ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ৬১ তেই অমরত্বের শিরোপা পান তিনি। অসুস্থতার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সন্তু মুখোপাধ্যায় – অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের বাবা হলেন অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়। বড়পর্দার পাশাপাশি ছোটপর্দাতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছেন সন্তু। তপন সিংহের ‘রাজা’ ছবি দিয়ে তাঁর বড়পর্দায় অভিষেক হয়। ‘গণদেবতা’, ‘দেবদাস’, ‘মালঞ্চ’, ‘হেমন্তের পাখি’ সহ বহু বাংলা সিনেমায় তাঁকে দেখা গিয়েছে। বড় পর্দায় কাজ করা ছাড়াও ‘কুসুমদোলা’, ‘অন্দরমহল’, ‘জল নূপুর’ ‘ইষ্টিকুটুম’ ধারাবাহিকেও দেখা যেত সন্তু মুখোপাধ্যায়কে। শেষে এই অভিশপ্ত বিষ বছরের ১১ই মার্চ দক্ষিণ কলকাতার নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জানা যায় যে, দীর্ঘদিন ধরে ব্লাডসুগার ও হাইপারটেনশনের রোগী ছিলেন সন্তু এবং সেই সঙ্গে চলছিল ক্যানসারের চিকিৎসাও। শেষে সন্তুও পান অমরত্বের শিরোপা।
শর্বরী দত্ত – টলিউডের জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। পুরুষদের ফ্যাশনের প্রথম পছন্দ ছিলেন শর্বরী দত্ত। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘শূন্য’ সবসময় ভরে ওঠে পুরুষদের এথনিক কালেকশনে। পুরুষদের জন্য এনেছিলেন রঙিন ও বাহারি ধুতি পাঞ্জাবীর ইউনিক কালেকশন। অনেক অভিনেতাই তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানে সেজেছেন শর্বরী দত্তের ফ্যাশনে। কিন্তু একী হল! নিজের শৌচাগারেই মিলল তাঁর নিথর দেহ। মাত্র ৬৩-বছর বয়সে বিদাই নেন তিনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, মস্তিষ্কে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় – চলতি বছরে গত ১৫ নভেম্বর পরলোক গমন করেন তিনি। টলিউডের মহীরুহ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কোভিডের সঙ্গে লড়াই করেছে বহুদিন। সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের বিপরীতে তাঁর প্রথম কাজ। উত্তম কুমারের সঙ্গে ঝিন্দের বন্দি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন টেনে নেন নিজের দিকে। বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তাছাড়া অনেক কবিতা লিখেছেন। আবৃত্তিতেও ছিল তার বিশেষ দক্ষতা। তাঁর গুনে মুগ্ধ বঙ্গবাসী সহ সারা পৃথিবী। বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে তাঁর মৃত্যু সংবাদ স্থান করে নিয়েছিল। এই বিষ বছরে তিনিও অমরত্বের শিরোপা পান। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার থেকে মুক্তি পেলেও, কোভিড পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন সৌমিত্রবাবু। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
মনু মুখপাধ্যায়– ৯০ বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন শেষে এই বিষ বছরের ৬ ডিসেম্বর অমরত্বের শিরোপা পান বর্ষীয়ান ও মাজাদার অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়। তাঁকে মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নিচে’ অভিনয় করতে দেখা যায়। এছাড়াও, ‘গণদেবতা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’,’দাদার কীর্তি’, ‘সাহেব’, ‘শ্বেত পাথরের থালা’, ‘গণশত্রু’, ‘পাতালঘর’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ সহ অগণিত বাংলা সিনেমায় তাঁকে দেখা গিয়েছে। হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। শেষে ৬ ডিসেম্বর বিদাই নেন তিনি।
শুধু যে টলিউড তা নয় বলিউড, হলিউড বিভিন্ন ভাষার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নক্ষত্র পতন হয়েছে এই বছর বহু। অস্বাভাবিক মৃত্যু বটে। কেউ ভাবতে পারেনি এত তাড়াতাড়ি তারা আমাদের ছেড়ে যাবেন।